মোঃ শাহজাহান ফকির স্টাফ রিপোর্টার
[ শ্রমিকলীগের সভাপতি থেকে শ্রমিক দলের আহবায়ক]
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের কিশোরগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক আলী উসমান সরকারি জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করে বহাল তবিয়তে আছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী রেলওয়ে কলনী ও ইয়ার্ডের আশপাশে রেলের সম্পত্তি লীজ নিয়ে বাড়ি বানানো কোন সুযোগ নেই, তা নিয়ম বহিভূর্ত। আলী উসমান রেলওয়ে বিভাগের পয়েন্টসম্যান পদে একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের আমলে ২০২৩ সনে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিয়েছিলেন। এবার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শ্রমিক দলের আহ্বায়কের পদ ভাগিয়েছেন। এ যেন তদবীর বানিজ্যে পাকা খেলোয়াড়। আওয়ামীলীগের আমলে দাপটের সহিত সরকারি জায়গা দখল, সরকারি গাছ আত্মসাত ও নানা ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত ছিলেন এ ছদ্মবেশী নেতা আলী উসমান। নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত না হলেও মাস শেষে স্বাক্ষর করে নিতেন তিনি। রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আওয়ামীলীগের বড় নেতাকর্মীদের সাথে উঠবস থাকার কারনে শ্রমিক লীগের সভাপতি পদের ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। স্টেশনে ডিউটি না করে রেলওয়ের বিভিন্ন চাকরির তদবির বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে প্রায় ৫/৭ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে আলী উসমানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাধীন নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে পয়েন্টসম্যানের দায়িত্ব থাকলেও দায়িত্ব পেলে দামীনামি ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে অবাধে চাকুরী বাণিজ্যের তদবিরে ঘুরিয়ে বেড়িয়েছেন। এতেই কান্ত হননি তিনি, তাঁর কর্মস্থলের পাশেই নিজ গ্রামে বাড়ি থাকলেও আলী উসমান তাঁর বাবা, মা ও তিন ভাইদেরকে নিয়ে বাড়িতে থাকেন না। তিনি নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনের কোয়ার্টারের পাশে রেলওয়ের সরকারি প্রায় ১৫শতক জায়গা যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা দখল করে পাকা ভবন করে স্থায়ী বসতি করে নিয়েছেন। তাঁর বাবা আবুল হাসেম একই পদে অবসর প্রাপ্ত একজন রেলওয়ে কর্মচারী। তছাড়া তাঁর তিন ভাইও রেলওয়ে বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ২০০৫ সনে মাস্টার রোলে রেলওয়েতে চাকুরী নিলেও ২০১৭ সনে তাঁর চাকুরী স্থায়ী হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সরকারি জায়গা দখল, সরকারি গাছ কর্তন সহ নিয়োগ সহ বিভিন্ন তদবীর বাণিজ্যের কর্মকান্ড। এছাড়া কিশোরগঞ্জ শহর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ক্রয়কৃত অনেক সম্পত্তি রয়েছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। তবে ৫ই আগস্ট গণঅভূত্থানের পরপরই রূপ পাল্টে নেয় আলী উসমান। নিজ ফেসবুক আইডি থেকে সরিয়ে নেয় পূর্বের শ্রমিকলীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন কর্মকান্ড। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে শ্রমিকদলের নেতাকর্মীদের সাথে আতাত করে এগিয়ে যায় সে। একপর্যায়ে গত ২৮ এপ্রিল/২৫ইং জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক ও কর্মচারী দলের কিশোরগঞ্জ শাখার আহ্বায়ক পদে আলী উসমানের নাম উঠে আসলেই নড়ে-চড়ে উঠে বসে এলাকাবাসী। এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. লিটন মিয়া ও এসআই বায়েজিদ মৃধা নান্দাইল রোড রেলওয়ে স্টেশনে আলী উসমানের দখলকৃত সরকারি জায়গায় গাছ কর্তন সহ নানাবিধ অভিযোগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় স্টেশনের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম জানান, আলী উসমান নিজ কর্মস্থলে দেখতে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে বললে তাকে চাকুরীচুত করার হুমকি দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা এহতেশামুল হক শাহীন বলেন, আমরা জানতাম আলী উসমান শ্রমীকলীগের সভাপতি ছিলেন, এখন দেখছি সে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে শ্রমিক দলের আহবায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে জায়গা দখল সহ অর্থ আত্মসাতের অনেক অভিযোগ আছে। নিজকর্মস্থলের পাশে তাঁর গ্রামের বাড়ি থাকলেও সরকারি জায়গা দখল করে স্থায়ী পাকাভবন নির্মাণ করে বসতি করেছেন। এ বিষয়ে আলী উসমানের বাবা আবুল হাসেম ও বড় ভাই হাসেম পাকা ভবনের কথা স্বীকার করে জানান, তাঁরা শুনেছেন আলী উসমান ওই জায়গা লীজে এনেছেন। আর না এনে থাকলে সরকার চাইলে আবার দিয়ে দিবেন। তবে অভিযুক্ত আলী উসমানের সাথে সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
Leave a Reply