অথই নূরুল আমিন
পহেলা মে, শ্রমিক দিবস, এই শ্রমিক দিবস পালন করে শ্রমিকেরা এবং তাদের কিছু সংগঠন। তবে এখানে শ্রমিকের কোনো লাভ নেই কখনও। কারণ মালিকেরা এই শ্রমিক দিবসের বিরোধী সবসময়। বিশেষ করে বাংলাদেশের শ্রমিকের সংখ্যা, মোট জনগুষ্টির ৩৫% এখানে মানিক পক্ষের সংখ্যা খুবই কম।
এখানে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা রয়েছে ৮% নারী শ্রমিকের সংখ্যা আছে ১৫% কিন্তু বিশেষ করে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা, তাদের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোনো ভরসা পাচ্ছেন না কখনও । তার প্রধান কারণ হলো মজুরি কম। শ্রমিকের মজুরির চেয়ে সবসময় পণ্যের দাম বেশি থাকে আমাদের দেশে । তাই শ্রমিকেরা আর অর্থনৈতিক সাবলম্বি হতে পারেন না।
অন্যদিকে ঘর ভাড়া। দেশের ৩২% শ্রমিক ভাড়া বাসায় বসবাস করে থাকেন। এখানে প্রতি বছর ঘর ভাড়া বাড়ানো হয়। প্রায় ৫% থেকে ১৫% পর্যন্ত। অথচ সেই অনুপাতে বেতন ভাতা বাড়ানো হয় না। বাংলাদেশে বৃহৎ একটি শ্রমিকের অংশ কাজ করেন গার্মেন্টস সেক্টরে। এখানে মালিক পক্ষ সবসময় বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিকের শ্রমের চেয়ে বেতন ভাতা সবসময়ই কম দিয়ে থাকেন।
আমার মতে চাকরি করা মানেই তারা শ্রমিক। গার্মেন্টস সেক্টরের পর বড়ো একটি অংশ চাকরি করেন, পরিবহন সেক্টরে। তারপর আরেকটি সেক্টর হলো নৌযানে। এবং উল্লেখযোগ্য আরেকটি সেক্টর হলো হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, মোটেল ও আবাসিক। এখানে সবচেয়ে অবহেলিত সেক্টর কিন্তু সবগুলো। শ্রমিকের প্রতি মালিক পক্ষের চরম অবহেলা লক্ষ্য করা যায় সবসময় ।
এরপর ছোট ছোট কল কারখানা গুলোতে ও বেশকিছু শ্রমিক রয়েছেন। তারাও মালিক পক্ষের কাছে চরম অবহেলিত। বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ক আইন থাকলেও শ্রমিকের প্রতি তাদের কোনো তদারকি নেই। যদি কোনো শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিক মামলা করেন কোনো মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে। তখন সেই মামলা চলমান হয়। তাও অনেক ধীর গতিতে।
সরকারের কাছে প্রথম দাবি, শ্রমিক সংগঠন কর্তৃক দাবিগুলোকে সরকারের শর্ত পূরণ করা।
তারপর দেশের সকল শ্রমিকের জন্য এককালিন সামান্য খরচে নাম নিবন্ধন করে সর্বজনীন পেনশন বা জীবন বীমা চালু করা। নিবন্ধন কৃত শ্রমিকের জন্য অবৈতনিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা। এবং আসন্ন বাজেটে এককালিন, ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের একটি শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড সৃষ্টি করে। অসহায় এবং অসচ্ছল শ্রমিকদের জন্য নিয়োজিত রাখা।
বাংলাদেশ সরকার নিজ উদ্যোগে যতদিন পর্যন্ত মিল কারখানা এবং বৃহৎ গার্মেন্টস না করবে, ততদিন পর্যন্ত দেশের শ্রমিকের বেতন মালিক পক্ষ খুব জোরালোভাবে বাড়াবেন না, যা একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। এছাড়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড করে, তাদের সবার জন্য জীবন বীমা পদ্ধতি চালু করলে, শ্রমিকের ভবিষ্যত উজ্জল হবে বলে আমি মনে করি। তারপরও বলবো, মহান মে দিবস অমর হোক। সকল শ্রমিক ঐক্য হোক। সকল শ্রমিক সুখী হোক।
অথই নূরুল আমিন
কবি কলামিস্ট ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
১ মে ২০২৫
Leave a Reply